আজ বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ক্রেতা-বিক্রেতায় মুখর নৌকার হাট

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

দম ফেলবার ফুসরত নেই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার নৌকার কারিগরদের। হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর হয়ে উঠছে নৌকার হাটগুলো। দিনভর হাটে ক্রেতাদের আনাগোনা দেখা যায়।
উপজেলার শীতলক্ষা নদীর পশ্চিমপাড়ের শিমুলিয়ার হাট, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন গোলাকান্দাইল হাট, কায়েতপাড়া ইউনিয়নের পিরুলিয়ার হাট নৌকার জন্য বিখ্যাত। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা নৌকা বিকিকিনি করতে আসেন এখানে। সকাল থেকে শুরু হয় নৌকা বেচাকেনার কাজ। আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, কালিগঞ্জ, নরসিংদীর মাধবদী, ঢাকার ডেমরা এলাকার ক্রেতারাও উপজেলার এসব হাট থেকে নৌকা কিনতে আসেন। পানি বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নৌকার হাটে।
বিক্রেতারাও ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির রঙের-ঢঙের নৌকা নিয়ে হাজির হন উপজেলার হাটগুলোতে। চাহিদা থাকায় বিক্রির ধুম লেগেছে। দামও পাচ্ছেন ভালো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপগঞ্জের নৌকা তৈরির ইতিহাস প্রায় শতাব্দী প্রাচীন। গাবতলী, পিরুলিয়া ও নয়ামাটি এ তিনটি গ্রাম লোকমুখে নৌকা তৈরির গ্রাম বললেই পরিচিত। এসব গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরি করে সংসার খরচের যোগান দেন। এক সময় কাঠের নৌকার চাহিদা থাকায় এ পেশার বেশ কদর ছিল। ৯০ দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় কাঠের নৌকার চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তবুও প্রতি বছর বৈশাখ থেকে ভাদ্র এ পাঁচ মাস নৌকার চাহিদার সঙ্গে বিক্রি বেড়ে যায়। কারিগরদের আয় রোজগারও ভালো হয়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন এলাকার নৌকা ব্যবসায়ীরা ছোট-বড় বিভিন্ন আকৃতির নৌকা এনে হাটগুলোতে পসরা সাজান। আকার ও কাঠের মান ভেদে একেকটি নৌকা তিন হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়ে থাকে। মৌসুমে চাহিদা বেশি থাকায় এ পেশা সংশ্লিস্টদের আয় রোজগারও ভাল হয়।
সোনারগাঁয়ের বরগাঁও থেকে নৌকা কিনতে আসা মোক্তার হোসেন জানান, মাছ ধরা, গো খাদ্য সংগ্রহ ও যাতায়াত কাজে ব্যবহারের জন্য তিনি ৭ হাত মাপের মেহগনি কাঠের একটি নৌকা ছয় হাজার টাকায় কিনেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় একটু বেশি দামেই নিতে হয়েছে নৌকাটি। তবে রেন্ডি ও চাম্বুল কাঠের নৌকা আরও কিছুটা কমমূল্যে পাওয়া যায়।
নৌকার কারিগর ভুপেন চন্দ্র সরকার বলেন, এখানকার কারিগররা রেন্ডি, চাম্বল, মেহগনিসহ বিভিন্ন কাঠর ছোট-বড় সাইজের নৌকা তৈরি করে থাকে। তবে রেন্ডি ও চাম্বুল কাঠের তৈরি সাত হাতি নৌকার চাহিদা বেশি। বর্ষা মৌসুমে বিচাবিক্রিও হয় ভালো। এ সময়ে নৌকার গ্রামের কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দিনরাত সমান তালে চলে নৌকা তৈরির কাজ। বছরের বাকি সময় টেবিল, চেয়ার, জলচৌকি, চৌকিসহ কাঠের নানা আসবাবপত্র তৈরি করে টিকে থাকে এখানকার কারিগররা।
গাবতলী গ্রামের নৌকার কারিগর হরিহর বিশ্বাস বলেন, নৌকা তৈরি আমাদের পৈত্তিক পেশা। একেকটি নৌকা তৈরি করতে আকারভেদে খরচ পড়ে দুই হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। ছোট বড় আকারভেদে প্রতিটি নৌকা বিক্রি করে এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হয়। ছোট নৌকা একদিনে তৈরি করতে পারলেও বড় গুলোতে ৪-৫ দিন সময় লাগে।
গোলাকান্দাইল হাটে নৌকার ব্যাপারী গিয়াস উদ্দিন জানান, অনেক বছর ধরে এ হাটে নৌকা বিক্রি করেন। সকালে বিভিন্ন সাইজের ১৬টি নৌকা নিয়ে হাটে এসেছেন দুপুরে ৯টি নৌকা বিক্রি করেছেন। একসময় নৌকার বেশ চাহিদা ছিল। ৯০ দশকের পর যান্ত্রিক সভ্যতার সঙ্গে নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট ও বেড়িবাঁধ তৈরি হওয়ায় দিন কাঠের নৌকার চাহিদা কিছুটা কমে যায়। তবে প্রতিবছর বর্ষায় ভালো চাহিদা থাকে। প্রতিহাটে ২০০-২৫০ নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে।

সর্বশেষ সংবাদ